ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত ৫ ডিসেম্বর ইসরায়েলি নারীদের ধর্ষণের শিকার হওয়ার খবর সবিস্তার বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছেন। তিনি বোঝাতে চাইছেন, হামাস যোদ্ধারা এতটাই বর্বর যে তাদের নিরস্ত করতে মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ ছাড়া আর কিছু করার নেই। তাদের এই ভ্রষ্টাচারের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের পক্ষে তিনি সভ্য জাতিগুলোর সমর্থন চান।
একই দিনে ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ এমএসএনবিসিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, হামাসের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ আসলে পশ্চিমা সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখার যুদ্ধ।
ইসলাম, জেন্ডার ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক ঐতিহাসিক এবং একজন নারীবাদী লেখক হিসেবে চট করে আমি নেতানিয়াহুর ভাষ্য ও হারজগের দাবির পেছনে কী, তা ধরে ফেলি। এ এক অতি পুরোনো ভাষ্য। তাঁরা তথাকথিত ‘সভ্যতার লড়াই’-এর কথা বলছেন, যার একটি পক্ষে আছে ‘সভ্য’ পশ্চিম, অন্য পক্ষে আছে ‘বর্বর প্রাচ্য’।
এই কাঠামোয় নারীদের প্রতি আচরণকে একটি গোষ্ঠী তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করে। নেতানিয়াহু ও হারজগের ভাষ্যের অন্তর্নিহিত অর্থ হলো ইসরায়েল একটি মুক্ত ও সভ্য দেশ । এই দেশের সমাজ নারীবাদী। তাই বিশ্বের সভ্য নেতৃত্বের উচিত ইসরায়েলকে শ্রদ্ধা করা। কারণ, দেশটিতে ‘মুসলিমদের’ একটি দল হামাস হামলা চালিয়েছে। তারা বর্বর, সহিংস এবং ভয়ংকর ধরনের নারীবিদ্বেষী। তাদের এই স্বভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে যুদ্ধে দলবদ্ধ ধর্ষণের মাধ্যমে।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনিদের ‘মানুষ’ হিসেবে গণ্য না করার প্রবণতার ব্যাপারে আগেই সতর্ক করেছিলেন। হামাস ও ফিলিস্তিনিদের তারা পশ্চিমা সভ্যতাবিরোধী হিসেবে উপস্থাপন করেছে। এতে তাদের অমানুষ হিসেবে প্রমাণও সহজতর হয়।
পশ্চিমারা ইহুদিদের নিয়ে গতানুগতিক প্রচারে যৌক্তিকভাবেই গা ভাসায়নি। এ ব্যাপারে তারা সতর্ক আছে। কিন্তু মুসলিমদের ব্যাপারে তাদের অবস্থান উল্টো। মুসলিমরা নারীবিদ্বেষী এই প্রচার নিয়ে তারা কোনো প্রশ্ন তুলছে না।