বিনায়ক সেন, অর্থনীতিবিদ ও মহাপরিচালক, বিআইডিএস
মজুরি নিয়ে তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের আন্দোলনের পেছনে রাজনৈতিক ইন্ধনের কথা বলা হলেও এই অসন্তোষের যৌক্তিক কারণও আছে। এর মূল কারণ হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিশেষ করে কয়েক মাস ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশের ওপরে রয়েছে। যদিও সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে।
মূল্যস্ফীতির উচ্চ হার মাথায় রেখে তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মাসিক মজুরি ১০০ মার্কিন ডলার হওয়ার উচিত। যদিও বর্তমান প্রেক্ষাপটে শ্রমিকনেতারা যে মজুরি দাবি করেছেন, সেটির যৌক্তিকতা রয়েছে। দারিদ্র্যসীমার ওপরে বসবাস করতে হলে বর্তমানে ২০ হাজার টাকার আশপাশে মজুরি থাকা দরকার। মালিকদের সেই মজুরি দেওয়ার সামর্থ্য আছে কি না, সেটিও একটি প্রশ্ন। বিশ্ববাজারে শিল্পের সক্ষমতা ধরে রাখতে মজুরি একলাফে ৮ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা করা সমীচীন হবে না।
এসব বিবেচনায় আমি মনে করি, শ্রমিকদের মজুরি ১০০ ডলার হওয়ার উচিত। খোলাবাজারে ডলারের বিনিময় হার বর্তমানে ১২০ টাকা। সেই হিসাবে ১০০ ডলারে ১২ হাজার টাকা হয়। এই মজুরি সহনীয় করতে সামাজিক সুরক্ষা হিসেবে প্রত্যেক শ্রমিককে এক হাজার টাকা দিতে পারে সরকার। এই অর্থ সরাসরি না দিয়ে চাল, ভোজ্যতেল ও ডালের একটি প্যাকেজ দেওয়া যায়। ভবিষ্যতে এটি অন্যান্য শিল্প খাতের শ্রমিকদেরও দেওয়া যেতে পারে।
অবশ্য পোশাক খাতের শ্রমিকদের এই সহায়তা দিতে মাসে খুব বেশি অর্থ লাগবে না। বর্তমানে এ খাতে শ্রমিক আছেন ৪০ লাখ। তাতে মাসে ৪০০ কোটি টাকা দরকার হবে। পোশাকশ্রমিকদের জন্য এই সহায়তা ছয় মাস থেকে এক বছরের জন্য চাচ্ছি। নিত্যপণ্যের দাম কমে এলে এটি আর দরকার হবে না। ১০০ ডলারের সঙ্গে বাড়তি ১ হাজার টাকা সহায়তা দিলে শ্রমিকেরা লাভবান হবেন।